• Recently Post

    এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় গ্রাম বানিয়াচং সম্পর্কে কিছু তথ্য

    ছবিঃ MR Traveler

    বানিয়াচং (Baniachong) গ্রাম ব্রিটিশ আমলে সিলেট জেলার অন্তর্গত ছিল। ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে হবিগঞ্জ মহকুমা গঠিত হলে শাসনকার্যের সুবিধার জন্য বানিয়াচং গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহ নিয়া ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ আগস্ট ২৮৬৭ জি. জে. বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক (East Pakistan District Gazettier, Sylhet, 1970) বানিয়াচং থানা গঠন করা হয়। ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দের ১৫ তারিখে বানিয়াচং থানাকে দেশের অন্যান্য থানার মতো প্রথমে মান-উন্নীত থানা এবং পরে উপজেলায় পরিণত করা হয়। তদানীন্তন উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও নৌবাহিনীর তদানীন্তন প্রধান রিয়ার এডমিরাল এম. এ. খান হেলিকপ্টার যোগে বানিয়াচং এসে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বানিয়াচং থানার মান-উন্নয়নের সরকারি ঘোষণা প্রকাশ করেন এবং সরকারী আদেশটি বানিয়াচঙ্গের প্রথম টি.এন.ও. বাবু বিকাশ চৌধুরীর নিকট হস্তান্তর করেন।


    ব্রিটিশ আমলে বানিয়াচং থানা গঠিত হলে থানার সদর দপ্তর বানিয়াচং গ্রামের পূর্বদিকে অবস্থিত নন্দীপাড়ার পূর্ব প্রান্তে স্থাপন করা হয়। তখন এবং পাকিস্তান আমলে (জেনারেল আইয়ুব খানের শাসন পূর্ববর্তী সময়ে) থানার প্রাঙ্গণ সকল সরকারি অনুষ্ঠানের কেন্দ্রস্থল ছিল। সেখানে বিভিন্ন দিবস উদযাপন করা হতো। ১৪ই আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচী এবং ঐ দিবস উপলক্ষে রাতের জমজমাট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থানা প্রাঙ্গণেই অনুষ্ঠিত হতো। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে বানিয়াচং থানাকে ’ভিলেজ এইড’ প্রোগ্রামের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ভিলেজ এইড প্রোগ্রামের সদর দপ্তর বড়বাজার সংলগ্ন ৩ নং কাঁচারী বাড়ীতে স্থাপন করা হয়। এ প্রোগ্রামের আয়ু বছর তিনেকেরও কম ছিল। তবে প্রোগ্রাম চলাকালীন ৩ নং কাঁচারী বাড়ী তথা প্রোগ্রামের সদর দপ্তর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ভিলেজ এইড প্রোগ্রাম পরিত্যক্ত হলে থানায় সার্কেল অফিসারের পদ সৃষ্টি করা হয়। বানিয়াচংয়ে সার্কেল অফিসারের দপ্তর প্রাথমিক ভাবে ডাক বাংলায় স্থাপন করা হয়। পরে কুমিল্লা সমবায় মডেলের বাস্তবায়নের কর্মসূচী হিসাবে থানা সদর গুলোতে থানা ট্রেনিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট কমপ্লেক্স বা টি.টি.ডি.সি. স্থাপন করার সময় সার্কেল অফিসারে দপ্তর দত্তপাড়ায় স্থানান্তর করা হয়। তখন থেকে থানার পরিবর্তে টি.টি.ডি.সি. সকল সরকারি কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে। পরে এই টি.টি.ডি.সি. উপজেলা সদরে পরিণত হয়।


    নামকরণঃ-

    বানিয়াচং এর নামকরণ সম্পর্কে বহু মতভেদ রয়েছে। তবে অনেকের মতে বানিয়াচং এর পুটিয়াবিল নামে একটি প্রকান্ড বিল ছিল। এই বিলে নানা জাতীয় পাখি বসবাস করত। বানিয়া নামে এক শিকারী এই বিলে একটি চাঙ নির্মাণ করে পাখি শিকার করত। কালক্রমে এই বিলটি প্রাকৃতিক কারণে ভরাট হয়ে গেলে বহু উচ্চ বৃক্ষলতাদিপূর্ণ ভূমিতে পরিবর্তিত হয়। এ ‘বানিয়া’ ও ‘চাঙ’ শব্দ থেকে বানিয়াচং নামের উৎপত্তি বলে অনেকে মনে করেন।


    প্রশাসনিক এলাকাঃ-

    বানিয়াচং উপজেলায় বর্তমানে ১৫টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম বানিয়াচং  থানার আওতাধীন।

    ইউনিয়নসমূহঃ-

    ১নং বানিয়াচং উত্তর পূর্ব

    ২নং বানিয়াচং উত্তর পশ্চিম

    ৩নং বানিয়াচং দক্ষিণ পূর্ব

    ৪নং বানিয়াচং দক্ষিণ পশ্চিম

    ৫নং দৌলতপুর

    ৬নং কাগাপাশা

    ৭নং বড়ইউড়ি

    ৮নং খাগাউড়া

    ৯নং পুকড়া

    ১০নং সুবিদপুর

    ১১নং মক্রমপুর

    ১২নং সুজাতপুর

    ১৩নং মন্দরী

    ১৪নং মুরাদপুর

    ১৫নং পৈলারকান্দি


    শিক্ষাঃ-

    বানিয়াচংয়ে ১টি সরকারি কলেজ সহ মোট ৩ টি কলেজ রয়েছে। ১টি সরকারি বালক ও ১টি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সহ সাতটি উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে


    অর্থনীতিঃ-

    বানিয়াচং উপজেলা হাওর এলাকা হওয়ায় এখানে ৯০% জমিতে এক ফসল জন্মে। তাই এই উপজেলার ৯০% লোক কৃষির উপর নির্ভরশীল। বাকিদের অধিকাংশই প্রবাসী।


    দর্শনীয় স্থানঃ-

    মহারত্ন বাড়ি,

    কমলারানীর সাগর দীঘি

    রাজবাড়ীর ধ্বংসাবশেষ,

    বিথঙ্গল আখড়া,

    দাড়া-গুটি।

    লক্ষী বাওর জলাবন

    বানিয়াচং রাজবাড়ি

    ভূপর্যটক রাম নাথের বাড়ি।

    মোঘল আমলের মসজিদ।


    মুক্তিযুদ্ধে বানিয়াচংঃ-

    বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে হবিগঞ্জের নেতৃবৃন্দ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বে এডভোকেট মোস্তফা আলী এমএনএ, কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী এমএনএ, লেঃ কর্ণেল (অব.) এম.এ. রব এমএনএ, এনামুল হক মোস্তফা শহীদ এমপিএ, মৌলানা আসাদ আলী এমপিএ, ডা. আবুল হাসিম এমপিএ, শ্রী গোপাল কৃষ্ণ মহারত্ন এমপিএ, আব্দুল আজিজ চৌধুরী এমপিএ, এডভোকেট আফছর আহমদ, এডভোকেট চৌধুরী আব্দুল হাই, এডভোকেট সৈয়দ আফরোজ বখত, এডভোকেট মো. জনাব আলী, শ্রী কৃপেন্দ্র বর্মণ, মো. ইয়াকুত চৌধুরী প্রমুখের সমন্বয়ে গঠিত হয় সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ। এই পরিষদের সমন্বয়ক হিসাবে গঠিত হয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ।


    তথ্য সূত্র : উইকিপিডিয়া