• Recently Post

    হিমালয় কন্যা পঞ্চগড় ভ্রমণ গাইড এবং দর্শনীয় স্থান সমূহ

    পঞ্চগড় ভ্রমণ
    হিমালয় কন্যা পঞ্চগড় 


    বাংলাদেশের সর্বোত্তরের জনপদ পঞ্চগড় ( Panchagarh ) যা হিমালয় কন্যা নামে পরিচিত। এই জেলার তিনদিকেই রয়েছে পাশ্ববর্তী দেশ ভারত। হিমালয় কন্যা নামে পরিচিত এই জেলা থেকেই দেখা যায় পৃথিবীর তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা(৮৫৮৬ মি)।
    এটি বাংলাদেশের একমাত্র স্থান যেখানে থেকে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে দেখা যায় হিমালয়, কাঞ্চনজঙ্ঘা ও এভারেষ্টের চূড়া । এ সময় আকাশ মেঘাছন্ন না থাকায় প্রতিদিন এই সৌন্দয্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছে নানান পেশাজীবি সহ ভ্রমনপিপাসু মানুষ। বিশেষ করে প্রতিদিন ভিড় জমছে জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার মহানন্দা নদীর তীর ঘেষে গড়ে উঠা পিকনিক কর্নারসহ বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে।
    এখান থেকে সুস্পষ্ট দেখা মিলে হিমালয়, কাঞ্চনজঙ্ঘা ও এভারেষ্ট চূঁড়ার মনকাড়া অপরূপ দৃশ্য।
    ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ের দূরত্ব ৪৫৭ কিলোমিটার। আর পঞ্চগড় থেকে তেঁতুলিয়ার দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার। তেঁতুলিয়া থেকে বাংলাবান্ধা ১৭ কিলোমিটার। পঞ্চগড় থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব ৮০০ কিলোমিটার। আর বাংলাবান্ধা থেকে টেকনাফের দূরত্ব ১০২১ কিলোমিটার। দেশের যে কোন স্থান থেকে সড়ক, রেল ও বিমানে করে পঞ্চগড় যাওয়া যায়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলা থেকে সরাসরি এখানে আসতে পারেন। ঢাকা থেকে ভালমানের নন-এসি বাস পঞ্চগড় ও তেঁতুলিয়া পর্যন্ত দিবা-রাত্রি চলাচল করে। ঢাকা থেকে রেলপথেও পঞ্চগড় আসা যায়। ঢাকা-সৈয়দপুর রুটে বিমান চলাচল করে। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ও ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স নিয়মিতভাবে ঢাকা-সৈয়দপুর ও সৈয়দপুর-ঢাকা রুটে চলাচল করছে। যেভাবে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন সেভাবেই যান । ঠাকুরগাঁও জেলা থেকেও হিমালয় দেখা যায় ।
    কিন্তু পঞ্চগড় কি কাঞ্চনজঙ্ঘার ভিউ ছাড়া আর কিছু দেখার আছে? হ্যাঁ, অবশ্যই আছে।

    কিভাবে যাবেনঃ-

    ট্রেন/বাস দুইভাবেই যাওয়া যায়।
    অপশন-১ঃ অনেকেই জানেন না পঞ্চগড় স্টেশনের নাম বি সিরাজুল ইসলাম স্টেশন। না জানার দরুণ অনেক হয়রানি হতে হয়।
    ঢাকা থেকে তিনটা ট্রেন আসা-যাওয়া করে পঞ্চগড়ে।
    ▪পঞ্চগড় এক্সপ্রেস- ঢাকা থেকে ছাড়ার টাইম রাত ১০.৪৫, পঞ্চগড় পৌছায় সকাল ৯ টার দিকে।
    ▪দ্রুতযান এক্সপ্রেস- ঢাকা থেকে ছাড়ার টাইম রাত ৮:০০ টা , পঞ্চগড় পৌছায় সকাল ৬.১০ এর দিকে।
    ▪একতা এক্সপ্রেস- ঢাকা থেকে ছাড়ার টাইম সকাল ১০.১০, পঞ্চগড় পৌছায় রাত ৯ টার দিকে।
    ▫️সবগুলো ট্রেন পঞ্চগড় পৌছায়তে কিছু সময় লেইট করে।
    ▫️ট্রেনগুলোর কোনো অফ ডে নেই।
    ▪ভাড়াঃ শোভন চেয়ার- ৭৩০ টাকা, স্নিগ্ধা-১১৪৫ টাকা, এসি বার্থ-১৯৪২ টাকা।
    অপশন-২ঃ ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ে হানিফ, নাবিল, শ্যামলী সহ অনেক বাস চলে। ঢাকা থেকে সরাসরি তেতুলিয়ার বাস ও আছে।
    ভাড়া জনপ্রতি-১১০০থেকে ২০০০ টাকা এসি ননএসি মিলিয়ে।

    পঞ্চগড় থেকে তেতুলিয়াঃ

    তেতুলিয়ার বাস ছাড়ে পঞ্চগড় বাস টার্মিনালের পাশে ধাক্কামারা মোড় থেকে। ভাড়া- জনপ্রতি ৫০-৮০ টাকা।ভাগ্য ভালো হলে এশিয়ান হাইওয়ে ধরে যেতে যেতে দেখতে পাবেন স্বাদের কাঞ্চনজঙ্ঘা। এশিয়ান হাইওয়ে পুরাই মাখনের মতো একটা রাস্তা।

    কি কি দেখবেনঃ

    ▪তেতুলিয়া ডাকবাংলো+কাঞ্চনজঙ্ঘা ভিউ পয়েন্ট

    তেতুলিয়া থেকে অটো ভ্যান ভাড়া নিয়ে চলে যাবেন ডাকবাংলো। ডাকবাংলোর পাশেই বয়ে গেছে মহানন্দা নদী। কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার অনেকগুলো ভিউ পয়েন্ট থাকলেও এখান থেকেই সবচেয়ে ভালোভাবে দেখতে পাওয়া যায়। সাধারণত অক্টোবরের লাস্ট উইক থেকে নভেম্বরের মিড পর্যন্ত কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। তবে পুরাটাই ভাগ্যের উপর ডিপেন্ড করে। কাঞ্চনজংঘা দেখার টাইম সাধারণত সূর্যোদয়ের পর থেকে সকাল ১১/১২টা পর্যন্ত। আলো বাড়ার সাথে সাথে এর রুপ চেঞ্জ হতে থাকে। বেশ কয়েকটি রুপে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা।ক্লোজ ভিউ পেতে হলে আপনাকে বাইনোকুলার নিয়ে যেতে হবে। ডাক বাংলোতে একটি পিকনিক স্পটও রয়েছে। তাছাড়া মহানন্দা নদীর সৌন্দর্যেও আপনি মুগ্ধ হতে বাধ্য।

    ▪কাজী এন্ড কাজী টি এস্টেট

    আমরা অনেকেই সিলেটের পাহাড়ী চা বাগান দেখে থাকলেও সমতল ভূমির চা বাগান খুব কমজনই দেখেছি। সমতল ভূমির চা বাগানের জন্য রয়েছে পঞ্চগড়ের সুনাম। ডাকবাংলো থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা শেষ করে অটো/ভ্যান নিয়ে চলে যাবেন চা বাগান দেখতে। বিশাল জায়গা নিয়ে এই চা বাগান।সমতল ভূমির চা বাগান এতোটা সুন্দর হতে পারে, না দেখলে বুঝতে পারবেন না! পঞ্চগড়ে চা বাগানের সূচনা করেন ড.নাজমুল হক স্যার।চা বাগান থেকে ফেরার পথে কমলা বাগান ঘুরে আসতে পারেন।

    ▪আনন্দধারা রিসোর্ট

    চা বাগানের পাশেই এই রিসোর্ট। বাংলাদেশের একপ্রান্তে তেতুলিয়ায় এতো সুন্দর একটি রিসোর্ট, যা ভাবতেও অবাক লাগে। রিসোর্টের গেইট থেকেই শুরু হবে আপনার বিস্ময়। আর যখন দেখবেন, রিসোর্টের ভেতর বেশ কয়েকটা ঘোড়া ঘুরে বেড়াচ্ছে, তখন মনে হবে রিসোর্টটা সত্যিই ব্যতিক্রমধর্মী। অবশ্যই পারমিশন লাগবে এই রিসোর্টে ডুকতে।

    ▪বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট

    তেতুলিয়া থেকে বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের স্থান বাংলাবান্ধার দূরত্ব ২২ কিমি। এই ২২ কিমি রাস্তা একদম সোজা। এখান থেকে শিলিগুড়ি-১৩কি.মি, গ্যাংটক-১৩৩ কি.মি। এখানে জিরো পয়েন্টে ছবি তুলতে হলে আপনাকে সিরিয়াল মেইনটেইন করে তুলতে হবে, মানুষ ঝাপিয়ে পড়ে ছবি তুলতে।

    ▪সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্যারেডঃ

    বাংলাবান্ধা বর্ডারে বিকাল ৫ টায় পতাকা নামানোর সময় দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা প্যারেডে বিভিন্ন ড্রিল প্রদর্শন করেন। প্যারেড উপভোগ করার জন্য আছে দুই দেশের নিজস্ব গ্যালারি।

    ▪রকস মিউজিয়াম

    শহরের মহিলা কলেজ প্রাঙ্গনে রয়েছে রকস মিউজিয়াম।১৯৯৭ সালে ড.নাজমুল হক স্যারের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় এই মিউজিয়াম। এখানের উন্মুক্ত ও অভ্যন্তরীণ নামে দুটো গ্যালারিতে দেখা যাবে দুর্লভ সব পাথর।
    এগুলো ছাড়াও দেখার মতো রয়েছেঃপ্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো মির্জাপুর শাহী মসজিদ, ১৫০০ বছর আগে খনন করা মহারাজার দিঘী, পাঁচটি গড়, আরো বেশ কিছু জায়গা রয়েছে।

    কোথায় থাকবেনঃ

    তেতুলিয়া ডাকবাংলোতে থাকতে হলে আগে থেকে কনফার্ম করতে হয়। তাছাড়া তেতুলিয়া, পঞ্চগড়ে মিড রেঞ্জের বেশ কিছু হোটেল আছে থাকার জন্য। এরকম কয়েকটি হচ্ছে পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া রোডে হোটেল মৌচাক, সিনেমা হল রোডে সেন্ট্রাল গেস্ট হাউজ, তেতুলিয়ায় চৌরাস্তা হতে বায়ে সীমান্তপাড় হোটেল। থাকা খাওয়া নিয়ে সমস্যা নেই।

    খরচঃ

    ঢাকা থেকে ৩০০০-৪০০০ টাকায় বেশ ভালোভাবে ঘুরে আসা যাবে। বাজেট ট্রাভেলার হলে আরো কম দিয়েও হবে।
    ▪️যারা ডে ট্যুরে যাবেনঃ তারা সকালে ডাকবাংলো থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা→ আনন্দধারা রিসোর্টে+চা বাগান→বিকালে বাংলাবান্ধা এভাবে ঘুরতে পারেন।
    ▪️সলো ট্যুর পসিবল।
    ▪️উত্তরবঙ্গে শীতের প্রাদুর্ভাব বেশি,শীতের কাপড় নিতে ভুলবেন না।