• Recently Post

    মধু খাইয়া ট্রেইল এবং ঝর্ণা বারৈয়ারঢালা, সীতাকুণ্ড, চট্রগ্রাম

     


    Modhu-Khaiya

    মধু খাইয়া ট্রেইলঃ বুনো পরিবেশে, ঝিরির পানিতে হাইকিং। চারপাশ নিঝুম নিস্তব্দ একটা ভাব। পায়ের নীচে পাথরের ভান্ডার। কোথাও কোথাও দুপাশের গাছ গুলোর ডাল, একটা সাথে অন্যটা এমন ভাবে জড়িয়েছে যে- সুর্যের আলো’ও হার মেনেছে। এ পাশটায় সাধারণ পর্যটকদের খুব একটা বিচরণ নেই। 

    মধুখাইয়া ট্রেইল



    হাঁটতে হাঁটতে পেয়ে যাবেন মধু খাইয়া ঝর্ণা। গা ছমছম করা পরিবেশ। ঝোপঝাড়. জঙ্গল দিয়ে ঘেরা মধু খাইয়া। পাথরের ভাজে ভাজে কলকল শব্দে পানি গড়িয়ে পড়ে। এর দ্বিতীয় ধাপে উঠতে হলে মধু খেয়েই উঠতে হবে! তা না হলে, পা ফসকালেই শেষ। অসাধরণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভান্ডার মধু খাইয়া। ঝর্ণার ওপর হতে জঙ্গলের রুপ দেখে, বিমোহিত আপনাকে হতেই হবে। দ্বিতীয় ধাপে উঠার পর বুঝতে বাকি রইলা না যে, মধু খাইয়া ঝর্ণার রুপ যতনা না সুন্দর-তার চাইতে অনেক অনেক বেশী দৃষ্টিনন্দন এর অবস্থান।  নামের স্বার্থকতা যাই হোক না কেনো, তবে মধু খাইয়া দেখতে যাবার ট্রেইলটা অসাধারণ ভালো লাগার। এরকম রোমাঞ্চকর ট্রেইলে অংশ নিতে পারা, ভ্রমণ জীবনে সবার জন্যই হবে দারুণ একটা অভিজ্ঞতা। মধু খাইয়ার নির্যাস নিয়ে ফিরে আসি, আবারো ইংরেজি ওয়াই অক্ষরের মত থাকা জায়গাতে। কমলদহ ট্রেইলে এরকম অনেক ওয়াই সাদৃশ্য স্থান রয়েছে। যার প্রতিটা ধরে আগালেই প্রকৃতির নানান রূপ চোখে ধরা দিবে। বেশ কিছুটা সময় হাইকিং-ট্র্যাকিং করার পর পেয়ে যাবেন অনিন্দ সুন্দর পাথরভাঙ্গা ঝর্ণা। তীব্র গতিতে প্রায় ৭০/৮০ ফিট উচ্চতা হতে অবিরাম ধারায় পানির ছন্দপতন।  ঝর্ণার আকৃতি অনেকটা ছুড়ির মত। ঝর্ণার সামনে প্রাকৃতিক ভাবেই জলাধার সৃষ্টি হয়েছে। 
    মধুখাইয়া ট্রেইল

    মধুখাইয়া ট্রেইল


    মূলত আমরা গিয়েছিলাম ক্যাম্পিং করতে, তাও প্রথম বারের মতো এমন জায়গায় আবার জীবনে প্রথম ক্যাম্পিং এর অভিজ্ঞতাঃ আমার প্রথম ক্যাম্পিং তাও একেবারে নেটওয়ার্ক এর বাহিরে। আমরা ১০জন মিলে গিয়েছিলাম মধুখইয়া ট্রেইলে, ট্রেইলে ডুকার শুরুতেই সন্ধ্যা কিছুদূর যাওয়ার পর অন্ধকার। মোবাইলের লাইট দিয়ে বাকি পথ গেলাম। প্রায় ৪০ মিনিট হাটার পর একটা ঝর্ণার সামনে ক্যাম্প সাইট সিলেক্ট হয়। এরপর তাবু সেটিং করে আমরা কয়েকজন শুরু লাকড়ি খোঁজা আর কয়েকজন এর কাজ মাছ ধরা। সন্ধ্যায় ঝালমুড়ি খেয়ে চা খাওয়ার জন্য আগুন নিয়ে খেলাটা অসাধারণ ছিলো। কত্তোবার যে ব্যর্থ হলাম আমরা, শেষ পর্যন্ত সেই পানি দিয়ে নুডলস খেতে হইছে। 

    মধুখাইয়া ট্রেইল



    চাঁদের আলোয় তাবুর ভিতর ঘুমানো সাথে ঝর্ণার কলকল শব্দ। রাতে বৃষ্টির মতো তাবুর উপর ফুলগুলো ঝরে পড়া। সকালে ঘুম থেকে উঠে ট্রেকিং করে আরও গহীনে গিয়ে ভয়ংকর খুমে যাওয়া, সেখান থেকে এসে চা, বিস্কিট দিয়ে সকালের নাস্তা শেষ করে, বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা।  

    ভ্রমণ তথ্যঃ সময় নিয়ে ভালোভাবে দেখতে হলে সকাল-সকাল যেতে হবে। সব মিলিয়ে প্রায় ৭/৮ ঘন্টার ট্রেইল। 

    মধুখাইয়া ট্রেইল



    কিভাবে যাবেনঃ ঢাকা হতে চট্রগ্রামগামী বাসে চড়ে নেমে যেতে হবে মিরসরাই উপজেলার বড় দারোগার হাট। সেখান থেকে সিএনজি/অটো’তে করে বারৈয়াঢালা ফটিক ছড়ি রোড ধরে নারায়ণ আশ্রম ,রেল লাইন ও ফরেস্ট অফিস পার হলে দেখবেন পিচ ঢালাই রাস্তাটি প্রায় ৯০ ডিগ্রি এঙ্গেলে হাতের বামে চলে গেছে । বাম দিকে না গিয়ে সোজা নিচের মাটির রাস্তা ধরে বনের ভিতরে দিয়ে গিয়ে বড় ঝিরিতে নামবেন। ঝিরি ধরে কিছু দূর গেলে দেখবেন ঝিরিটি আরেকটি ঝিরির সাথে যুক্ত হয়েছে । যা ইংরেজি টি এর মত দেখা যাবে। ডানে বা বামের ঝিরিতে না গিয়ে ওই ঝিরি পার হয়ে পাহাড়ি পথে উপরে উঠবেন । এই স্থান টিকে উঠনির মুখ বলে। এই পাহাড়ি রাস্তা ধরে গিয়ে নামা দিয়ে মুল ফটিক ছড়ি রাস্তায় নামবেন। মুল রাস্তা ধরে না গিয়ে ঝিরি ও পাহাড় এর এই অংশ টিকেই মধু খাইয়া ট্রেইল বলে।


    যা করবেন নাঃ খাবার-দাবারের অপচনশীল মোড়ক ফেলে আসবেন না। প্রয়োজনে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ফেলবেন। দক্ষ গাইড সঙ্গে নিন। অন্যথায় হারিয়ে যাবার সুযোগ রয়েছে।