• Recently Post

    সোনাইছড়ি ট্রেইল ক্যাম্পিং এর ভূতুড়ে বাস্তব ঘটনা

    সোনাইছড়ি ট্রেইলে ভৌতিক ঘটনা

    মিরসরাই রেঞ্জ এর সোনাইছড়ি ট্রেইল (Sonaichari Trail) এ এডভেঞ্চার প্রেমীদের সাথে রাতের ক্যাম্পিং এ ঘটে যাওয়া বাস্তব ভৌতিক ঘটনা নিয়েই আজকের এই পোস্ট। পোস্ট গুলো ফেসবুক থেকে সংগ্রহ করা, এবং পোস্ট গুলো হুবহু এইখানে তুলে ধরা হলো। এইখানে মূলত তিনটি ঘটনা শেয়ার করা হয়েছে। 


    ঘটনাঃ-১ সোনাইছড়ি ট্রেইলে ভৌতিক ঘটনার সাক্ষী!

    ক্যাম্পিং (সোলো অথবা গ্রুপসহ) আমার কাছে একটা নেশার মতো। আমি যখনই সময় পাই বা মাঝেমধ্যে কাজের চাপে একটু ডাউন ফিল করি তখন ব্যাকপ্যাকের সাথে তাবু নিয়ে বেরিয়ে পড়ি ক্যাম্পিং এর উদ্দেশ্যে। ক্যাম্পিং যে আমার কাছে শুধুমাত্র নেশা তা না, ক্যাম্পিং আমার মনমানসিকতা শান্ত রাখার একটা ঔষধও বটে। আর এই কারনেই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গা এক্সপ্লোর করতে বেরিয়ে পড়ি।

    সীতাকুণ্ড-মিরাসরাই রেইঞ্জও এমন একটি জায়গা যেখানে শান্তির খোঁজে প্রায়সই যাওয়া হয় আমার। ক্যাম্পিং করতে গিয়ে এর আগে কখনো কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু গত ৫ অক্টোবর আমি এবং আমার বন্ধু যে ভয়ংকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি তা আর দ্বিতীয়বার হতেও চাই না।

    সেদিন আমাদের প্ল্যান ছিলো বান্দরবান রুমা সার্কিটে যাওয়ার। কিন্তু শেষ মুহূর্তে কয়েকজনের কারনে প্ল্যান চেইঞ্জ হওয়ায় আমরা ৪জন মিলে সোনাইছড়ি ট্রেইলের উদ্দেশ্যে রওনা হই।

    ট্রেইলে পৌছানোর পর যথারীতি সবাই অনেক ক্লান্ত ছিলাম। কিন্তু যেহেতু আমি ট্রাভেলিং এর পাশাপাশি স্মৃতি ক্যামেরাবন্দী করতেও অনেক পছন্দ করি তাই তাবু লাগিয়ে ঝর্ণার আশেপাশে ছবি তোলার জন্য নেমে পড়লাম।

    ঘটনার সময়টা যখন, তখন রাত ১১টা কি সাড়ে ১১টা হয়তো। আমরা ৪জনের মধ্যে ২জনের তাবু ছিলো ঝর্ণার একদম কাছে আর আমার এবং আমার বন্ধু জয় তাবু ছিলো ঝর্ণা থেকে একটু দূরে। তো আমি যাচ্ছিলাম রাতের ঝর্ণার কিছু ছবি তোলার জন্য আর জয় আমাকে বলছিলো সে খুব টায়ার্ড তাই কিছুক্ষণ সে রেস্ট নিতে চায়। তাই তাকে আর জোর না করে আমি চলে গেলাম ঝর্ণার কাছাকাছি এবং সে তাবুতে ঢুকে গেলো ঘুমাবে বলে।


    ১৫/২০ মিনিট পর হঠাৎ আমি একটা বিকট শব্দ শুনলাম......


    মনে হচ্ছিলো আমাদের পাশেই বড় একটা পাহাড়ের অংশ ধসে পড়েছে। আমি হঠাৎ এমন শব্দ শোনাতে একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। শব্দটা আসলেই বিকট ছিলো এবং আমি কিছুক্ষণের জন্য স্থির হয়ে যাই যে এটা কি শুনলাম।

    বন্ধুর চিৎকারে হুশ আসলো। সে আমাকে চিৎকার করে ডাকছিলো, "জলদি আয়!! কি পড়ছে দেখ তো একটু। এমন জোরে আওয়াজ শুনলাম যে"

    আমি তৎক্ষনাৎ দৌড়ে গেলাম তার কাছে। আশেপাশে ভালো করে লাইট দিয়ে চেক করলাম।


    কই!! কিছুতো নাই!! 

    কিন্তু এইমাত্র যে শব্দ শুনলাম!! 


    শব্দটা আমরা ৪জনই শুনেছিলাম কিন্তু এমন শব্দ হওয়ার পিছনে কোনো কারনই খুঁজে পেলাম না আমরা 🙂


    যাইহোক বাদ দিলাম এই চিন্তা। সবাই ঝর্ণার পাশে গিয়ে চেরাগ জ্বালিয়ে বসলাম, আড্ডা দিলাম। আমার বন্ধু জয়ের চোখের ঘুম ততক্ষণে উধাও। 

    রাত বাড়তে থাকলো। আমরা এবার শুরু করলাম খাবার দাবার এর পালা যেহেতু সবাই অনেক ক্ষুদার্থ ছিলাম। খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই ঘুমাতে যাই ২টার দিকে। 


    কিছুক্ষণ পর শুরু হয় অন্য এক অদ্ভুৎ শব্দ। কোনো এক নাম না জানা প্রাণীর ডাকের মতো লাগছিলো। প্রাণীর ডাক এজন্যই বললাম কারন আমরা সবাই কম বেশি বিভিন্ন প্রানীর ডাকের সাথে পরিচিত। বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম সে এই ডাক শুনেছে কিনা। সে বললো, হ্যাঁ শুনলাম। আমারতো ইঁদুরের ডাক মনে হলো!! 🙃 সে এইটা বলে ব্যাপারটা এড়িয়ে গিয়েছিল আসলে 🤦‍♂️


    আমি জীবনে বহুবার জঙ্গলে ক্যাম্পিং করেছি, এই ট্রেইলের চেয়েও গভীর জঙ্গলে রাত কাটিয়েছি। বান্দরবানের বিভিন্ন পাহাড়ে, জুম ঘরে রাত কাটিয়েছি। প্রকৃতির শব্দ/নিস্তব্ধতা, জীব জন্তুর ডাক সম্পর্কে আমার ভালোই ধারণা আছে। এসব জায়গায় রাতের পরিবেশ কেমন হয় সেটিরও ধারণা আছে। কিন্তু সেই রাতে আমি যা যা নিজ কানে শুনলাম তার কোনো ধারণা আমার ছিলোনা এবং তার কোনো ব্যাখ্যাও আমার কাছে নেই।


    বিভীষিকাময় এই রাত যেনো কাটছিলোই না। আমি ঘুমাতে গিয়েও কয়েকবার ঘুম ভেঙ্গেছে। টেন্ট থেকে বের হয়ে সিগারেট জ্বালিয়ে বসে ছিলাম অনেক্ষণ আনমনে।  আবার ঘুমাতে গিয়েছি। এরপর এক ঘুমে একেবারে সকালে ৫টাই ঘুম থেকে উঠলাম। চা খাওয়ার সময় জয় বললো সে নাকি রাতে উদ্ভট উদ্ভট শব্দ শুনতে পাচ্ছিলো তাবুর আশেপাশে।  মনে হচ্ছিলো কেউ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে। এসব শব্দের কারনে সে সারারাত ঘুমাতেই পারেনি। এসব হয়তো আমি ঘুমানোর পর শুনেছিলো সে কারন আমি এই শব্দগুলো শুনি নি।

    এরপর ট্রেইল থেকে ব্যাক করার সময় ভাবছিলাম গতরাতের ঘটনা। এসব কি শুনলাম, কেনোই বা শুনলাম!!

    লোকালয়ে আসার পর গ্রামের মানুষজনদের জিজ্ঞেস করলাম এখানে খারাপ কিছু আছে কিনা, কেনো আমরা রাতে এসব পরিস্থিতিতে পড়লাম। তাদের ভাষ্যমতে এই ট্রেইলে খারাপ কিছুই নেই। হয়তো আমাদের মনের ভুল।

    কিন্তু তাই বলে কি ২জন মানুষেরই একই ভুল হবে?

    বাকিটা আল্লাহ ই ভালো জানেন।।


    কিন্তু ঘটনা এখানেই শেষ না 🙂

    গত ২ দিন আগে জয় আমাকে ফোন দিয়ে বললো সে নাকি ঐ ট্রেইল থেকে আসার পর রাতে ঠিকভাবে ঘুমাতে পারছে না। আর তার সাথে কিছু অস্বাভাবিক জিনিস ঘটছে যেমনঃ সে যদি পুরো ঘর গুছিয়ে বাসা থেকে বের হয়, বাসায় এসে দেখে ঘর এলোমেলো হয়ে আছে। রাতে তার রুমের টেম্পারেচার হঠাৎ করে বেড়ে যায় যা আগে কখনো হয়নি। 

    আমি তার এসব শুনে তাকে যতো দ্রুত সম্ভব কোনো হুজুরের কাছে যেতে বলেছি কারন সেদিন এতোসব ঘটনার পর রাতে আমরা সবাই ঘুমিয়ে পড়লেও জয় ঘুমাই নি। এবং সে নাকি কারোর হাঁটার শব্দও পেয়েছিলো। 


    যাই হোক, এই ছিলো আমাদের ক্যাম্পিং করতে গিয়ে ভৌতিক অভিজ্ঞতা। যদিও এই ঘটনা পড়ে অনেকের কাছে ভৌতিক মনে নাও হতে পারে কিন্তু আপনি যদি ঐ জায়গায় ঐ সময়ে উপস্থিত থাকতেন, তবে শব্দগুলো আপনার বুকেও নাড়া দিতো এটুকু আমি গেরান্টি সহকারে বলতে পারি। গভীর জঙ্গলে ৪জন মানুষ। আশেপাশে কিছু নেই, না লোকালয়,  না মানুষজন।  শুধু পাহাড় গাছপালা আর ঝর্ণার শব্দ। এই পরিস্থিতিতে এমন উদ্ভট শব্দ যে কারোরই ভীতির কারন হয়ে দাঁড়াবে।

    সোনাইছড়ি ট্রেইলে ভৌতিক ঘটনা

    বিঃদ্রঃ ছবিতে ডান পাশের ওই অন্ধকারাচ্ছন্ন  জায়গাটিতেই বিকট আওয়াজে পাহাড় ধসের শব্দ শুনেছিলাম। এবং এর আশেপাশেই বন্ধু Joy Uddin  কারোর হাঁটার শব্দ পেয়েছিলো 🙂

    মূল পোস্ট করেছেনঃ-  https://www.facebook.com/Arifryan769

    মূল পোস্ট এর লিংক পেতে এইখানে ক্লিক করুন


    ঘটনাঃ-২ সোনাইছড়ি ক্যাম্পিং এর কালো রাত

    প্রায় ২ বছর আগের ঘটনা। ভেবেছিলাম শেয়ার করবো না। কিন্তু সোনাইছড়ির এমন আরো কিছু ঘটনা ইতিমধ্যেই শেয়ার করেছেন অনেকেই। তাই কেন জানি আজ শেয়ার করতে ইচ্ছে হচ্ছে। কয়েকবার এই ঘটনার বিবরণ মুখে কয়েকজনকে বলেছি, এই প্রথম লিখতে বসলাম। লিখাটা একটু লম্বা হবে। চেষ্টা করবো পুরো ঘটনাটা আপনাদের সামনে তুলে ধরার। আশা করি সময় নিয়ে পড়বেন। আপনার সময় বৃথা যাবে না।  


    তারিখঃ ৮-৯ জানুয়ারী ২০২১

    ডেসটিনেশনঃ সোনাইছড়ি ট্রেইল। ইভেন্ট ২ দিনের। 

    প্ল্যানঃ ট্রেইলের সুবিধাজনক জায়গায় রাতে আমরা ক্যাম্পিং করবো।

    টিম মেম্বারঃ ১১ জন।


    সোনাইছড়ি ক্যাম্পিং


    লিখাটি পড়ার আগে পোস্টে দেয়া গুগল ম্যাপের স্ক্রিনশট টা ভালোভাবে দেখে নিন, কত নাম্বার তাবুর পজিশন কোথায়। 

    ঘটনাটা বুঝার জন্য কোন তাবুতে কে ছিলো সেটাও জানা জরুরী।

    তাবু ১ > রাসেল, দীপ্ত, সজল।

    তাবু ২ > মারভি, সাদিয়া। 

    তাবু ৩ > এই তাবুতে কেউ ছিলো না। আমাদের ব্যাগপ্যাক ও জিনিসিপত্র রাখা।

    তাবু ৪ > রেজওয়ান, অর্নব।

    তাবু ৫ > মানিক, হান্নান, হেলাল, **ফরমান**


    আমরা সকালে চট্টগ্রাম থেকে রওনা হয়ে বাস থেকে মীরসরাই হাদি ফকির হাট নেমেই BBQ এর জন্য মুরগী আর অন্যান্য বাজারের সাথে একটা দা ও ২ টা চেরাগ আর কেরোসিন কিনে ট্রেইলে ঢুকে পড়ি।


    ট্রেইলে ঢুকেই আমরা টেন্ট পিচ করার মত জায়গা খুঁজতে লাগলাম। এই ট্রেইলের ভূমি এতোটাই উঁচু নিচু যে আমরা কোনভাবেই তাবু খাটানোর জায়গা খুজে পাচ্ছিলাম না। অবশেষে একটা জায়গা পেলাম যেখানে কিছুটা সমতল আছে কিন্তু সেক্ষেত্রে ২ টা তাবুর মধ্যে দূরত্ব বেশি হয়ে যাচ্ছিলো। ম্যাপের স্ক্রিনশটে দেখবেন ১ নাম্বার তাবু থেকে ৫ নাম্বার তাবুটা দেখা যায় না। কারণ মাঝখানে একটা বাঁক আছে ট্রেইলে। আবার ২,৩,৪ নাম্বার তাবু থেকে ১ নাম্বার ও ৫ নাম্বার তাবুটাও বেশ দূরে। বেশ উচ্চস্বরে না ডাকলে একটা থেকে অন্যটায় কাউকে ডাকলে শোনা যাবে না। উপায় না পেয়ে এই জায়গাটাই আমরা পছন্দ করলাম।


    বরাবরে মত টিম ভাগ করে ফেললাম। ১ টিম গেলো পাহাড়ে শুকনো লাকড়ি জোগাড় করতে। ১ টিম তাবু খাটাচ্ছে। অন্য টিম রান্নাবান্নার প্রস্তুতি শুরু করেছে।

    লাকড়ির টিম স্ক্রিনশটে নীল কালারের মার্ক করা পাহাড়টায় ১৫-২০ মিনিট হেঁটে গিয়ে ১ ঘন্টার মধ্যে অনেকগুলো শুকনো কাঠ পেয়ে গেছে ও কাধে করে নিয়ে আসার পথে টিমমেট সজল পাথরে স্লিপ করে পড়ে গিয়ে খুব ব্যাথা পায়। 

    তাবু পিচ করার টিমটা শুকনো পাতা ফেলে জায়গা সমান করে তাবু পিচ করলো। 

    টিমের হেড কুক হলো ফরমান, সে ৫ নাম্বার তাবুর বাসিন্দা। তাঁর নেতৃত্বে খুব মজার বিরিয়ানি রান্না হলো। সবাই ভরপুর খেয়ে ঝর্ণা দেখে এসে বিকেলে চা-বিস্কিট খেয়ে আড্ডা দিলাম। 


    সন্ধ্যা নামে নামে অবস্থায় পোর্টেবল স্পীকারে গান চালিয়ে আমাদের কুক ফরমান খুব মজার নৃত্য পরিবেশন করা শুরু করলো সে বরাবরই সবাইকে মাতিয়ে রাখে ট্যুরে গেলে। এমন সময় হুট করেই আমাদের ২,৩,৪ নাম্বার তাবুগুলোতে পাহাড়ের উপর থেকে ছোট ছোট মাটি আর পাথরের টুকরো পড়া শুরু করলো। আমরা খুব ভয় পেয়ে যায় আর উপরে তাকাতেই দেখি ছোট বড় মিলিয়ে ৪০-৫০ টা বানর। পরক্ষণেই আমরা বুঝতে পারলাম বানরগুলো ২ গ্রুপে বিভক্ত হয়ে একগ্রুপ অন্যগ্রুপকে আক্রমণ করছে। আরো কিছুক্ষণ পর এই আক্রমণ তুমুল যুদ্ধে রূপ নিলো। এক গ্রুপের বানর টেনে হিঁচড়ে অন্য গ্রুপের এক সদস্যকে নিয়ে গেলো, রক্তাক্ত করলো, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া সহ এই তুমুল যুদ্ধ চললো প্রায় ১৫-২০ মিনিটের মত। বানরের একগ্রুপ পালিয়ে চলে গেলো। অন্য গ্রুপটাও কিছুসমসয় সেখানে অবস্থান করে আমাদের ক্যাম্পিং সাইট ত্যাগ করলো। ম্যাপের স্ক্রিনশটে লাল স্টার দেয়া জায়গাটায় বানরের এই যুদ্ধটা চলে।


    এদিকে সন্ধ্যা নেমেছে, ঝিঝিপোকাগুলো একে অপরের সাথে যেন প্রতিযোগিতা দিয়ে ডেকে চলেছে। জোনাকি পোকারাও উড়ছে এদিক সেদিক। যেহেতু শীতকাল ঠান্ডা বাতাসে হাত পা জমে যাচ্ছিলো আমাদের। আমরা আগুন জ্বালালাম। সবাই আগুনের পাশে এসে জড়ো হলো। বেশ কিছুক্ষণ ফরমানের নাচের তালে তালে গান বাজনা হলো। এরপর BBQ এর প্রস্তুতিও শুরু হলো। কাটা মুরগীর মাংস নিয়ে ৫ নাম্বার তাবুর বাসিন্দা রাঁধুনি ফরমান একাই চলে গেলো একটু দূরে ঝিরিতে। সেখানের পানি বেশ পরিস্কার। তাই সেখানে ধোঁয়া হবে মুরগীর মাংস। অনেকক্ষণ হয়ে গেলেও ফরমান ফিরছে না দেখে একই তাবুর বাসিন্দা হান্নান গিয়ে তাকে নিয়ে মাংস হাতে ফিরে আসলো। ফিরে ফরমান সবার থেকে একটু দূরে বসে পড়লো পাথরে। কেমন যেন নিস্তেজ দেখাচ্ছে। সারাদিন রান্নাবান্না করেছে, নাচ-গান করলো তাই সে ক্লান্ত, এই ভেবে আমি আর রাসেল ভাই BBQ করা শুরু করলাম। BBQ করা শেষ। সবাইকে খেতে ডাকলাম। সবাই আসলেও ফরমান একটু দূরেই বসে থাকলো। ফরমানের খাবার ওর সামনে দিয়ে আসা হলো। আমি আগেই সবাইকে বলে দিয়েছি যেন কেউ ঝিরিতে বা পাহাড়ে কোন ময়লা না ফেলে। ব্যবহার করা প্লেট, টিস্যু ও ওয়ানটাইম কাপ যেন এক জায়গায় রাখে। খাওয়া শেষ সবার। এবার আমি চা বানাচ্ছি আর সবাই ঝিরিতে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হচ্ছে। সবাই ফিরলে চা খেলাম। এরপর বাকীরা আবারো আড্ডা আর ফটোশুটে ব্যস্ত। আমি আর রাসেল ভাই ঝিরিতে গেলাম হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হবো। ঝিরিতে গিয়ে দেখতে পেলাম ঝিরি অপর প্রান্তে সাদা কিছু একটা পানিতে ভাসছে। একে অন্যের দিকে তাকিয়ে ঝিরি পার হয়ে ওপাড়ে গিয়ে দেখলাম কয়েকটা টিস্যু ভাজ করে সেখানের উপরে BBQ করে খাওয়া মাংসের কিছু হাড় কেউ ভাসিয়ে দিয়েছে। বিষয়টি দেখে খুব মেজাজ খারাপ হলো। সেটি হাতে নিয়ে গুটিয়ে আমি জঙ্গলে ফেলে দিলাম। 


    ঝিরি থেকে ফিরেএসে বাকীদের সাথে আড্ডাগানে সামিল হলাম। আমরা আসার সাথে সাথেই আমাদের নিস্তেজ হয়ে যাওয়া রাঁধুনি ফরমান একা তাবুতে ঘুমাতে চলে গেলো। সে ক্লান্ত। সে যে তাবুতে ঘুমাতে গেলো সেটি ৫ নাম্বার তাবু। আর আমরা সবাই ছিলাম ১ নাম্বার তাবুর কাছে। সুতরাং আগেই বলেছি তাবু ঝিরি আর পাহাড়ের পজিশন মোতাবেক ১ নাম্বার তাবু থেকে ৫ নাম্বার তাবু দেখা যায়না। আর চিৎকার করে না ডাকলে শোনাও যাবে না সেখান থেকে। ফরমান ঘুমাতে যাওয়ার আরো ৩ ঘন্টা পর বাকী টিম মেম্বার সবাই ঘুমাতে গেলো। তখন বাজে রাত ১ টা থেকে দেড়টা। আমি আর রাসেল ভাই স্লো শাটারে ছবি তুলছিলাম আকাশ তারা আর তাবুর। ছবি তোলা শেষে আমি আর রাসেল ভাই রাত আনুমানিক ২ টার দিকে নিজ নিজ তাবুতে এসে ঢুকলাম।


    তাবুতে ঢুকার ২-৩ মিনিটের মধ্যে ৫ নাম্বার তাবু থেকে ২/৩ জনের চিৎকার শুনতে পেলাম। ওরা ভীত গলায় চিৎকার করে আমাকে ডাকছে। আমি বুঝতে পারছিলাম খারাপ কিছু একটা হয়েছে। হাতে দা আর টর্চটা নিয়ে তাবু খুলে দৌড় দিলাম ৫ নাম্বার তাবুর দিকে। যেতে যেতে আবারো ৫ নাম্বার তাবুর মেম্বারদের চিৎকার। ওরা বলছে মারা যাচ্ছে। ফরমান মারা যাচ্ছে। আমি গিয়ে তাবুতে ঢুকে দেখলাম ফরমানের চোখ বন্ধ হয়ে গেছে, দাঁতে দাঁত কামড়ে ধরে শরীর শক্ত হয়ে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে আর মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে প্রচুর। আমরা সবাই মূহুর্ত্বের মধ্যে হতচকিত হয়ে গেলাম। কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। ফোনে নেটওয়ার্ক নেই। কি করবো মাথা কাজ করছে না। সবাই খুব অসহায় আমরা। চোখের সামনে মৃত্যু দেখতে পাচ্ছি। ফরমাননের মাথাটা টেনে আমার কোলে উঠালাম। চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি একজন চলে যাচ্ছে। হান্নান কলমা পড়া শুরু করলো ওর কানের কাছে গিয়ে। “লা ইলাহা ইল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”। সাথে সাথে ফরমানের নিস্তেজ হয়ে যাওয়া শরীর খুব শক্তি নিয়ে ঝাড়া দিয়ে উঠলো। আমরা সবাই এক মুহূর্ত্বেই বুঝে গিয়েছি আমাদের সাথে কি ঘটছে। এবার সবাই দোয়া পড়া শুরু করলো আর ফরমানের দেহ ঝাড়াঝাড়ি করা শুরু করলো। বডি উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে বারবার ঝাড়ি দিতে দিতে। আমি ফরমানকে কোনভাবেই ধরে রাখতে পারছি না। এবার কয়েকজন একসাথে ধরলো। আমি আয়াতুল কুরসি ও দোয়া ইউনুস পড়তে পড়তে ওর ঘাড়ের উপর হাত দিয়ে ওকে বোগলের নিচে চেপে ধরলাম। হান্নান দীপ্তকে বলল দীপ্ত আজান দে। দ্বীপ্ত ইসলাম ধর্মের অনুরাসী ছিলো না। সে আজান যানে না। সেও ভয়ে আল্লাহ্ আল্লাহ্ করতে থাকলো। আমি ফরমানকের ঘাড়ে হাত দিয়ে চেপে রেখেই আজান দেয়া শুরু করলাম। এতো সজোড়ে আজান দিচ্ছি যে আশেপাশের কয়েকটা পাহাড়ে এটি নিশ্চিত শোনা যাচ্ছে। আজানের এক পর্যায়ে ফরমান চোখ খুলে আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে আছে আর গিরিগির করছে যেন আমাকে এখনই খেয়ে ফেলবে সে। আমিও তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে চিৎকার করতে করতে আজান দিচ্ছি। এ যেন ফরমানের শরীরের সাথে আমাদের এক যুদ্ধ।


    আজানের শেষের দিকে ফরমান নিস্তেজ হয়ে চোখ খুলেছে। চোখ খুলে হাত উঁচু করে তাবুর বাইরে ২,৩,৪ নাম্বার তাবুর দিকে আঙ্গুল দিয়ে কিছু দেখানোর চেষ্টা করতেছে। তাঁর আঙুল নামানোর সাথে সাথে ২ নাম্বার তাবুতে থাকা মেয়েদের চিৎকার। সাথে সাথে দৌড়ে গিয়ে দেখি ২ জন মেয়ে একে পরকে জড়িয়ে ধরে ভয়ে গুটিসুটি মেরে আছে। তাঁদের চিৎকারের কারণ হলো আচমকা বাতাসে ওদের তাবু নড়ে উঠেছিলো। সেখান থেকে ৫ নাম্বার তাবুর পাশে আনা হলো মেয়েদেরকেও। সবাই এখন ফরমানের মুখের দিকে চেয়ে আছি। কি ঘটে গেলো? কেন হল? কি হলো? কত প্রশ্ন সবার মনে। ফরমানকে পানি দিলাম। সে চোখ বন্ধ অবস্থায় পানি খেলো একটুখানি। এবার সে চোখ বন্ধ অবস্থায় আদো আদো অগোছালোভাবে কিছু কথা আমাদের বলল। কথাগুলো সব গুছিয়ে আমরা যা বুঝেছি তা হলোঃ ৫ জন আগন্তুক এসেছিলো ফরমানকে মেরে ফেলতে। আমাদের টিমের মধ্যে দুপুরে লাকড়ি আনতে গিয়েছিলো যারা, তাঁদের মধ্যে কেউ এই ৫ আগন্তুকের ঘর ভেঙ্গে ফেলেছে। রাতে যখন ফরমান একা ঝিরিতে মাংস ধুতে গিয়েছিলো তখন এই ৫ আগন্তুক ফরমানের কাছে মাংস চেয়েছিলো। ফরমান মাংস দেয়নি, সেখান থেকেই ফেরার পর সে নিস্তেজ ও শান্ত হয়ে আলাদা জায়গায় বসে ছিলো। এই অগন্তুক ৫ জনের ভয়ে ফরমান সেই BBQ খাওয়ার পরের এটো মুরগীর হাড়গুলো টিস্যুতে করে ভাসিয়ে দিয়েছিলো। সে ভেবেছিলো হাড় দিলে ওরা কিছুটা সন্তুষ্ট হবে। যেটি আমি নিজেই সেখান থেকে তুলে ফেলে দিয়েছিলাম। ৫ আগন্তুকের ঘর ভেঙ্গে দেয়া। মাংস না দেয়া ও এটো হাড় দেয়ার অপরাধে ফরমানকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলো তারা। 


    এবার সবার মধ্যে ভয় কাজ করছে। আগুন জ্বালাতে হবে। আমরা সবাই ৫ নাম্বার তাবুতে আর আগুন জ্বালানোর সরঞ্জাম সব ১ নাম্বার তাবুর কাছে। কেউ ভয়ে যেতে রাজী হলো না। আমি আর রাসেল ভাই গিয়ে চেরাগ, কেরোসিন আর সাথে কিছু কাঠ আনলাম। ৫ নাম্বার তাবুর সামনে ও ২,৩,৪ নাম্বার তাবুর সামনে আগুন জ্বালিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম সকাল হওয়ার। ভোর হলো ফরমানকে ডেকে তোলা হলো। গতকাল রাতে ঝিরিতে মাংস ধুতে যাওয়া থেকে শুরু করে সকাল পর্যন্ত ফরমানের কোন স্মৃতি আর মনে নেই। রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিবরণ শুনে ফরমান আমাদের কাউকে বিশ্বাস করছে না। এরপর সকালের খাবার সেড়েই আমরা ক্যাম্প সাইট ত্যাগ করে ট্রেইল থেকে বের হয়ে আসি। এই ঘটনার পরে ফরমান গত ২ বছর আর কোন ট্যুরে এটেন্ড করেনি। এবং এখনো তাঁর সেদিনের ঘটনার কিছুই মনে নেই। 


    ছোট বেলায় আমাদের ধানের জমিতে কাজ করা মানুষগুলোর জন্য খাবার নিয়ে যেতাম বিলে। এমনকি সেখানে আমার এক দাদাকেও দেখেছি বিলে খাওয়ার আগে একটা পাতায় খুব অল্প খাবার রেখে দিতো দূরে করে। সেটা কেউ খেতো না। আর সন্ধ্যার পরে বাইরে খোলা আকাশের নিচে খাবার খেতে নিষেধ করতো। অনেকের পাকের ঘর দূরে ছিলো। পাকের ঘর থেকে মূল ঘরে খাবার আনা নেয়ার সময় ঢেকে আনা-নেওয়া করতো। সাদা কোন খাবারের জিনিস বাইরে ঢাকনা ছাড়া নেয়াতো অন্যায় ছিলো। এসব নিয়মকানুন গুলো কেন এসেছে তার কারণ কিছুটা হলেও আমি এই ট্যুরে গিয়ে বুঝেছি। বিষয়গুলি আপনাদের কতটা যৌক্তিক মনে হবে বা বিশ্বাসযোগ্য মনে হবে আমি জানিনা। কিছু ব্যাপার থাকে যেটার কোন ব্যাখ্যা নাই কিন্তু সত্য। এটা তেমনই একটি ঘটনা। এই রাতটি খুব লম্বা ছিলো। শেষই হচ্ছিলো না।  

    ২ জন হুজুরের সাথে আমি এই ঘটনা শেয়ার করেছি উনারা বলেছেন নিঃসন্ধেহে এই ৫ আগন্তুক জ্বীন ছিলো। পৃথিবীতে জ্বীন আছে। নিশ্চয়ই তাঁরা মানুষের সাথে লোকালয়ে বা শহরে বাস করেনা। ওদের জায়গায় আমরা গিয়ে ওদের বিরক্ত করায় এমনটা আমাদের সাথে ঘটেছে বলেই বিশ্বাস করেন তাঁরা। 


    সেদিন আমাদের নিকট নেটওয়ার্ক, ডাক্তার, এম্ব্যুলেন্স, মেডিসিন, হাসপাতাল, কিছুই ছিলো না। আমাদের কাছে থাকা কোন অপশন সেদিন কাজ করেনি। নিঃস্ব ও নিরুপায় সবার কাছে সৃষ্টিকর্তা ছিলো একমাত্র অবলম্বন। তিনি কখনো মুখ ফিরিয়ে নেন না। আল্লাহ্ সহায়।

    মূল পোস্ট করেছেনঃ 

    https://www.facebook.com/Shezan0

    মূল পোস্ট এর লিংক পেতে এইখানে ক্লিক করুন। 



    ঘটনাঃ-৩ সোনাইছড়ী ট্রেইলের ভূতুড়ে বাস্তব ঘটনা

    সোনাইছড়ী ট্রেইলের ভূতুড়ে বাস্তব ঘটনা


    যেখান থেকে শুরু করা যায় সেটা হলো সোনাইছড়ী যাওয়ার জন্য দুদিন আগে থেকেই প্লানিং চলছিলো,

    আর ঘটনাটি হলো গত বছরের মার্চ মাসের

    তো গত ১৮-০৩-২০২১ রোজ বৃহস্পতিবার আমি সাতজন টিম মেম্বার দের নিয়ে বিকেলের আগেই রওনা হয়ে যাই সোনাইছড়ী ট্রেইল মিরসরাই হাদীফকিরহাটের উদ্দেশ্যে। 

    আমরা সবাই বিকেল ৫ টা ৪০ এ পৌঁছে যাই সেখানে।

    তো সবাই বিকেলের নাস্তা করে বারবিকিউ এর জন্য মুরগী আর যাবতীয় জিনিস নিয়ে রওনা হয়ে যাই সোনাইছড়ী ট্রেইলের পথে।

    আমাদের কিছু মেম্বার দেরিতে আসার কারনে সন্ধ্যা হয়ে যায় ট্রেইলে ঢুকতে ঢুকতে, 

    যাই হোক আমরা সবাই  সিদ্ধান্ত নিলাম যে আজকে আর রাতে ট্রেইলে ঢুকবো না রিস্ক নিয়ে লাভ নেই শুধু শুধু বিপদের সম্মুখীন হতে হবে পরে।

    পরে আমি একটা জায়গা ঠিক করলাম যেই জায়গাটি ক্যাম্পেইন করার জন্য আদর্শ জায়গাও বলতে পারেন।

    জায়গাটি ছিলো বসতবাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে কতগুলো আমগাছের নিচে।

    ঠিক আম গাছের পাশেই আমি তাবু ফিটিং করবো ভাবলাম এবং সবার মতামতের ভিত্তিতে এখানেই আমরা তাবু ফিটিং এবং বারবিকিউ এর আয়োজন করলাম।

    সবাই তো খুশিতে আত্মহারা উফফ কি যে মজা হবে রাতে বারবিকিউ আর গান-বাজনা, আড্ডা, মস্তি হবে। শুধু এসব হবে বললেই নয় সবই হয়েছে।

    গলা ফাটিয়ে গানও গেয়েছি সবাই। 

    তো আমরা সবাই খাবার রেডি হওয়ার পরপরই সবাই খাওয়া শুরু করে দিলাম কারন সবারই ক্ষিদা লেগেছিল প্রচুর।

    খাওয়া শেষ করে আবার সবাই বাহিরে বসে আড্ডা দিতে লাগলাম আর গান গাইতে লাগলাম, আর তাঁবুর পাশেই ক্যাম্প ফায়ার এর সামনে সবাই বসে ছিলাম।

    তো আমরা সবাই চিল মুডে ছিলাম সবাই যার যার মতো এনজয় করছিলাম, 

    তো তখন বাজে রাত প্রায় ১২ টার কাছাকাছি। 

    আমার তখন ঘুম পাচ্ছিলো খুব তাই আমি তাবুর ভেতর ঘুমোতে গেলাম।

    আমি ঘুমের মধ্যে এতো কিছু খেয়াল করিনি,

    তখন বাজে রাত আনুমানিক ২ টার কাছাকাছি ঠিক সেই মুহুর্তে আমার ট্যুর মেট শাহাদাত ভাই চিৎকার দিয়ে ওঠে এই....এই... করে তখন আমি ধুমধাম ঘুম থেকে উঠলাম উঠে বললাম ভাই কি হয়েছে, কি হয়েছে আমাকে বলেন কি হয়েছে, 

    তখন শাহাদাৎ ভাই যা বললো আমি তো শুনে থ হয়ে আছি।

    শাহদাৎ ভাই চিলেন তাবুর এক কর্নারে আর আমি ছিলাম আরেক কর্নারে,  তো শাহাদাত ভাই শোয়ার আধা ঘন্টা কি এক ঘন্টা পরে লক্ষ্য করলেন উনার পাশে দিয়ে কেউ একজন চলাফেরা করছে আর উনার কাছে আশার চেষ্টা করছে, 

    তো উনি প্রায় এরকম ৩০/৪০ মিনিট যাবৎ সহ্য করে যাচ্ছেন কিন্তু কাউকে কিছুই বলেননি। কিন্তু এবার  সেই আশেপাশে ঘুরপাক খাওয়া জিনিসটা তাবুর বাহিরে দিয়ে ঠিক শাহাদাত ভাইয়ের পিঠের পাশে বসলেন তখনও শাহাদাত ভাই কিছুই বলেনি উনি মনে মনে চিন্তা করতেছেন হয়তো চলে যাবে কিন্তু না সেই অদৃশ্য জিনিসটা শাহাদাৎ ভাইয়ের পিঠের উপর কি দিয়ে যেন, চাপ দিলো তখনই শাহাদাত ভাই সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে উঠলেন

    এবার আসেন পরের ঘটনায় 

    শাহাদাত ভাই চিৎকার দেওয়ার সাথে সাথেই আমাদের সবারই ঘুম ভাঙ্গে আর আমরা তখন একটু নার্ভাস ফিল করছিলাম আর মনে মনে একটা ভয়ও কাজ করছিলো যার কারনে আমরা ঘটনাটা ঘটে যাওয়ার পর আরো ১০ মিনিট তাবুর ভেতর অপেক্ষা করছিলাম। আমি সবাইকে বললাম একটু চুপ থাকতে, পরিবেশটা যখন একটু শান্ত হলো তখন আমি আস্তে আস্তে তাবুর চেইনটি খুলে বাহিরে লাইট মেরে দেখলাম আশেপাশে কিছু আছে কি না।

    নিজের মধ্যে প্রচুর ভয় কাজ করছিলো তাও আমি তাবু থেকে বের হলাম বের হয়ে সবাইকে একটু সাহস দিলাম।  

    সবাইকে বললাম তাবু থেকে বের হতে, সবাই বের হলো এবং শুকনো কাঠকয়লা নিয়ে আসলো আগুন ধরানোর জন্য। আগুন ধরিয়ে সবাই আড্ডা দিচ্ছিলাম আর সবাইকে বলছিলাম ভাই ভয় পাওয়ার কিছুই নেই তেমন কিছু না। এই কথা বলে কিছুক্ষণ পর আমাদের সাথের একজন নাম আকাশ ভাই তিনি বললেন রাফি ভাই আমি যা দেখছি আপনি কি তা দেখছেন? আমি বললাম ভাই কই কি দেখলেন আপনি? একটু পরে লক্ষ্য করলাম আকাশ ভাই যা দেখছে তা আমিও দেখছি। দূরে ঐ শিম গাছের ক্ষেতে কে যেন, দাড়িয়ে আছে সাদা কাপড় গায়ে জড়িয়ে চোখ দুটো তার লাল জ্বলজ্বল করে উঠছিলো। তা দেখে নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না আমি কি সঠিক দেখছি? জীবনের প্রথমবার এমন একটা জিনিস চোখে দেখবো কল্পনাও করিনি। সে রাতে কেউ আর ঘুমাইনি, আগুন জ্বালিয়ে জ্বালিয়ে রাতটা পার করছিলাম কোনোরকম। মাথায় একটাই চিন্তা কখন সকাল হবে আর এখান থেকে বের হবো। ভোর ৫ টায় যখন একটু একটু সকাল হতে লাগলো তখন সবাই তাবুতে গিয়ে শুতে যায়। আমিও একটু চোখ বুজেছিলাম ২০/৩০ মিনিট। সকাল হয় সবাই ঘুম থেকে উঠে সবকিছু গুছিয়ে রওনা হই নিজ নিজ গন্তব্য। 


    বিঃদ্রঃ ঘটনাটি সত্য এবং এটি গত বছরের ঘটনা যা আমাদের সাথে ঘটে গেছে। জীবনে এরকম অভিজ্ঞতাও হবে কখনো কল্পনা করিনি। যাই হোক আমরা সবাই সেফ ছিলাম আলহামদুলিল্লাহ

    মূল পোস্ট করেছেনঃ- 

    https://www.facebook.com/Rafi6284

    মূল পোস্ট এর লিংক পেতে এইখানে ক্লিক করুন।